Health

ওজন কমানোর উপায় – ঘরে বসে সাত দিনের মধ্যে ওজন কমানোর উপায়

বিধাতা আমাদের নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। বিধাতার সৃষ্টি মানবজাতি কেউ মোটা অথবা কেউ চিকন। অনেকে রয়েছে অতিরিক্ত মোটা আবার অনেকে রয়েছে অতিরিক্ত চিকন। অতিরিক্ত চিকন হলে মোটা হওয়ার ইচ্ছে জাগে আবার অতিরিক্ত মোটা হলে চিকন হওয়ার ইচ্ছা জাগে। আমাদের শারীরিক গঠনের ওপর নির্ভর করেই আমাদের শারীরিক ওজন নির্ভর করে। আপনার উচ্চতা ওপর নির্ভর করেই বর্তমানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন দেওয়া হয়েছে।

আপনি যদি অতিরিক্ত মোটা থাকেন তাহলে এটা আপনাকে সামাজিকভাবে অনেক বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে। এছাড়াও শারীরিক ভাবে আপনার ওজন যখন অনেক বৃদ্ধি পাবে তখন আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধা থাকতে শুরু করে। এতে করে আপনি মানসিকভাবে যেমনটা ভেঙে পড়েন অন্যদিকে আপনার শারীরিক বিভিন্ন ধরনের রোগ জমাতে শুরু করবে। আপনি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ওজন কমাতে হবে যার কারণে আপনি এখন বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসে থেকে কিভাবে ওজন কমানো যায় তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

আজকের এই আর্টিকেল ঐ সকল ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যাদের ওজন অনেক বেশি এবং যারা দীর্ঘ সময় ধরে ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন। আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি বেশ কিছু সহজ মাধ্যম যেগুলোর মাধ্যমে আপনি এখন ঘরে বসে থেকে মাত্র এক মাসের মধ্যেই আপনার শরীরের ওজন কমাতে পারবেন। তবে আপনাদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা হলো এই যে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওজন কমানো সম্ভব নয় আর ওজন কমানো অনেকটাই কঠিন যার কারণে অনেকে হয়তো আপনাকে বলবে যে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওজন কমা।

ওজন কমানোর উপায়

অতিরিক্ত ওজন কারো কাম্য নয় অনেকেই আছেন যারা ওজন কমানোর জন্য অনেক টাকা খরচ করেও নিজেদের ফিট রাখতে পারছেন না। অনেকে আবার নির্দিষ্ট কোন চাকরির জন্য ওজন কমানো দরকার পড়ে কিছু চাকরিতে পদোন্নতির জন্য হলে কর্মীর ওজন জরুরী বিষয় হিসেবে দেখা হয়। আবার অন্যদিকে বিশেষ অস্ত্রোপচারের আগে জরুরী ভিত্তিতে রোগীর ওজন কমানোর প্রয়োজন পড়ে। নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ রাখার জন্য সাধারণত মাসে 45 কেজি ওজন কমানো যায় তবে কারো যদি জরুরি কারনে এক মাসের 7 কেজি বা তারও বেশি ওজন কমানোর দরকার পড়ে তাহলে আপনাকে অবশ্যই পরিকল্পনা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

আপনারা যারা এক মাসের মধ্যে ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নিচের দেওয়ার নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করুন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই আপনার বর্ধিত ওজন কমাতে সাহায্য করুন।

খাদ্যাভাস পরিবর্তন

আপনার লক্ষ্য যদি মাসে 7 কেজি ওজন কমানো হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে আপনাকে খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। আপনার খাদ্যাভাসে যেন নিয়ম মেনে প্রতিদিন একই সময়ে খেতে হয় সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। সকালবেলা ভারী নাস্তা দুপুরে ভাত এবং রাতে রুটি বা হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাঝখানের সময়টুকু ফলমূল খেতে পারেন এ খাদ্যাভাস আপনাকে ওজন কমাতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

সুষম খাবার গ্রহণ

ওজন কমানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই বেশি পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন। চর্বি অথবা চর্বিজাতীয় খাবার পুরোপুরি খাওয়া বাদ দিতে হবে। বাইরের তেলে ভাজা খাবার খাদ্য তালিকা থেকে একেবারে বাদ দিন এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। দুই বেলার মধ্যবর্তী সময়ে যদি ক্ষুধা লেগে থাকে তাহলে পপকর্ন ফল বা ফলের জুস খেতে পারেন।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পরিহার করুন

মানসিক টেনশন আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে এই ব্যাপারটি আমাদের সকলের কাছে অবাক করার মতো হলেও আপনাদের জন্য বলতে চাই যে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার ওজন বাড়তে সাহায্য করে। কারণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ফলে মানুষ বেশি খেয়ে থাকে ফলে মোটা হওয়ার প্রবণতা একটু বৃদ্ধি পায়। সুতরাং নিজেকে ফিট রাখতে হলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম 

একজন সুস্থ মানুষ দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন তবে এর বেশি ঘুমালে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য হলেও আপনার পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি দিনের বেলায় ঘুমানোর যে অভ্যাস রয়েছে সেই অভ্যাসটা দূর করতে পারেন। মনে রাখবেন অতিরিক্ত ঘুম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই নিয়ম মেনে রাতে জলদি ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং ভোরবেলা উঠে পড়ুন।

ব্যায়াম

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে কয়েকটি উপায় রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করা হচ্ছে ব্যায়াম। আপনি যদি প্রতিদিন ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে শারীরিক কসরত করেন তাহলে আপনার শরীরকে ফিট রাখতে তাব সাহায্য করবে। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করতে চান তাহলে দেখবেন যে আপনার শরীরে যে অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে তা ঘাম আকারে বের হয়ে যাবেন। তাই আপনি যদি এক মাসের মধ্যে আপনার ওজন কমাতে চান তাহলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা করে ব্যায়াম করতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন ভোর বেলা দৌড়ানো হাঁটাহাঁটি ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারেন এর পাশাপাশি চাইলে আপনি জিমনেসিয়ামে ভর্তি হয়ে নিয়মিত জিম করতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানো আদর্শ ব্যায়াম। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে ব্যায়াম করার জন্য হলেও ঘরের বাইরে জিমনেশিয়াম বা পার্কে যেতে হবে এমন কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি ঘরের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে নিজের ব্যায়াম সেরে নিতে পারবেন।

রাতে তাড়াতাড়ি খাবার চেষ্টা করুন

ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন এবং চেষ্টা করুন আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করে দেওয়ার। আপনি যদি রাতের খাবার শেষ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যান তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি পারেন রাতের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং খাবার দুই ঘণ্টার মধ্যেই ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে খিদে লাগলে ফলের জুস অথবা দুধ খেতে পারেন।

খাওয়ার আগে পানি খান

খাবার গ্রহণের 10 থেকে 15 মিনিট আগে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে পারেন আপনার হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যথাসম্ভব বাড়িতে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং জাঙ্কফুড জাতীয় খাবার পুরোপুরি পরিহার করুন।

অতিরিক্ত খাবার পরিহার করুন

আপনার শরীরের জন্য যেটুকু খাবার প্রয়োজন ঠিক ওই পরিমাণ খাবার খান। নিজের শরীরের চাহিদার তুলনায় যখন অতিরিক্ত খাবার খাবেন তখন আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাওয়া বিশেষ জরুরী। তাই অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

চিনি পরিহার করুন

কাঙ্খিত ওজন কমানোর জন্য আপনার খাদ্য তালিকা থেকে তিনি পুরোপুরি পরিহার করা আবশ্যক। এক জরিপে দেখা গিয়েছে মাত্র 1 চা চামচ চিনিতে 16% ক্যালোরি থাকে যা আপনাকে ওজন কমানোর সম্পূর্ণ অন্তরায়। সুতরাং চা এবং দুধ খাবার সময় চিনি পরিহার করার চেষ্টা করুন।

গ্রিন টি

গ্রীন টি তে রয়েছে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনাকে ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এক বগগানি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন চার কাপ করে যদি কোন ব্যক্তি গ্রিন টি 1 সপ্তাহ খেয়ে থাকে তাহলে তার শরীর থেকে 400 গ্রাম ক্যালোরি ক্ষয় করা সম্ভব। এটাই আমাদের দেহের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে ফলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গ্রিন টি অবশ্যই রাখুন।

Related Articles

Back to top button
Close